কোন ভাষায় পড়তে চান সিলেক্ট করুন

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

সংঘাত নয় শান্তি - আল-মারুফ (ছোট গল্প)


সিরাজ ঢালী  পাচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মমাপিক সময় নিয়ে পড়েন। নামাজ কাজা করে পড়েন না।  ভোররাত্রে নিত্যকার অভ্যাস অনুযায়ী ওজু করে আজ ও তার বড় ছেলের রুমে গেলেন তাকে ঘুম   থেকে  জেগে নামাজ পড়ানোর জন্য।  অন্যান্য দিনের মতন আজ ও তিনি ভুল করলেন শুধু শুধু ছেলের রুমের গেছেন। না তার ছেলেকে ঘুম থেকে জেগে তুলতে পারেন নি। কি করে তার ছেলেকে জেগে তুলবেন আজ তিন মাস হয়ে গেছে তার বড় ছেলে বদরুল মারা গেছেন। আর প্রায় ভোর রাত্রে সিরাজ  ঢালী এ ভুলটি করেন ছেলেকে ঘুম থেকে জেগে ওঠাতে আর রুমে যান। আর ভুলটি তিনি করবেনেই না কেন। সেই ছোট বেলা থেকে ছেলেটার ২৫ বছর পযন্ত তিনি এভাবেই তার ছেলেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বাপ-বেটা মিলে একসাথে মসজিদে নামাজ পড়তেন। এত দিনের অভ্যাস কি সহসা চলেযায়।
  সিরাজ সাহেব আজ ও তাই একলা মসজিদে চলে গেলেন যদিও তার ছোট ছেলে রাকিব ঢালীকে       ডেকেছিলেন কিন্তু ঘুম থেকে তাকে জেগে তুলতে পারেন নাই। তাই বাধ্যহয়ে একলা মসজিদে গিয়ে       নামাজ পড়ে চোখের পানি ফেলে বড় ছেলের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া চাইলেন।

  সিরাজ ঢালী বড় ছেলে বদরুল ছিলেন খুবই ঠান্ডা প্রকৃতির ছেলে কিন্তু আর ছোট ছেলে রাকিব খুবই আক্রোশী টাইপের মারপিট প্রিয় জেদি।


মোকসেদপুরের ঢালী পরিবার আর তালুকদার পরিবার সেই অনেক আগ থেকে পরস্পর পরস্পরের বিরোধী। কেউ কারো ভাল সহ্ন করতে পারেন না। এটা এখন তারা এতিহ্য মনে করেন।  যদি ও তাদের এই পুরোনো শত্রুতা কি দিয়ে শুরু তা তারা নিজেরা ও জানেন না।
এক এক সময় তাদের পরিবারের মারামারির হাল একএক ধড়েন। ঢালী পরিবারের এই হাল সিরাজ ঢালীর ছোট ছেলে রাকিব এর কাধে। যদি নিয়মমাপিক সিরাজ ঢালীর উপর এই দায়িপ্ত ছিল।কিন্তু সিরাজ ঢালী মারপিট পছন্দ করেন না তাই এই দায়িপ্ত তার ছোট ছেলে রাকিবের কাধে।
আর তালুদার পরিবারের মারপিটের হাল ধরেছেন। কাসেম তালুকদার। যদি ও কাসেম তালুকদারের বড় ছেলে হামিদ তালুকদারের গায়ে এই দায়িপ্ত ছিল। কিন্তু  হামিদ তালুকদার পুলিসের আসামী হওয়ায় তিন মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তাই কাসেম তালুকদারের গায়ে এই দায়িপ্ত।
ধান কাটার সময়  সিরাজ ঢালী মাঠে কামলাদের সাথে সকাল থেকে আছেম।মাঠে কামলাদের সাথে হ্মেত্রের মালিক পহ্মের কেউ না থাকলে কামলাদের কাজের গতিধীর থেকে। তাই সিরাজ ঢালী সকাল বেলা থেকেই মাঠে আসেন। দুপুরবেলা প্রচণ্ড গরম। রোদের আলোর তেজ অনেক বেড়ে গেছে সিরাজ ঢালী অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ছোট ছেলে রাকিবকে ও পাচ্ছেন না যে কামলাদের সাথে থাকতে বলবেন। তাই বাধ্য হয়ে কামলাদাদের মাঠে রেখে বাড়ি চলে আসলেন।
আজ যদি তার বড় ছেলে বদরুলটা বেচে থাকতো তবে তার মাঠে আসতে হত না।
দুপুরবেলা নিত্যদিন ছেলেটা তাকে বেলের শরবত বানিয়ে দিত। আবার ছেলেটার কথা মনে পড়ে গেল সিরাজ ঢালীর চোখ দিয়ে পানি ঢল বেড়ে পড়লো।
কাশেম তালুকদার অনেক দিন ধরে তার ছেলেকে কাছে পান না। তার ছেলে হামিদকে পুলিশ খুজছেন। প্রায় রাত্রি পুলিশ তার বাড়ি তল্লাশি চালান। না পারেন নিজে শান্তিময়  রাত্রীযাপন করতে না পারেন তার ছেলে  স্বাধীন জীবনযাপন করতে।
হামিদ এখন ২৭ বছরের এক ছেলে। যে বয়সে নিজেকে গড়ে তুলতে লড়াই করার কথা। বাবাকে তার ব্যবসায় সাহায্য করার কথা। ঘর সংসার করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার কথা সে বয়সে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সব সময় মানুষিক জীবনযাপন করছেন।
সকাল বেলা সিরাজ ঢালী ছোট ছেলে রাকিব বাজার থেকে ছুটে আসলো একটা  মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে। ছুটে এসে তার বাবাকে বলিলেন।

রাকিব ঢালী:- বাবা একটা সুসংবাদ আছে।
সিরাজ ঢালী :-  কি সংবাদ খোকা।
রাকিব ঢালী :- বাবা সেলিনার স্বামী মারা গেছেন আজ ভোর রাত্রীতে।
সিরাজ ঢালী:- (ইন্নাইলাহী.....) খোকা এভাবে বলতে হয় না খোকা এতে গুনাহ হয়।
রাকিব ঢালী:- আমার ভাইকে মেরেছে যারা তারা কিভাবে শান্তিতে থাকবে বাবা।
সেলিনা কাসেম তালুকদারের একমাত্র মেয়ে। সিরাজ ঢালীর বড়ছেলে বদরুল ও সেলিনা দুজন দুজনাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ছিল। কিন্তু দুই পরিবারের ভিতর আদি বিরোধ তাদের ভালবাসাটা  সংসার জীবনে আসতে দেয় নাই। যদি ও ছেলের মানুষিক কষ্ট দেখে সিরাজ ঢালী কাসেম তালুকদাকে আত্নীয়তার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল কিন্তু কাসেম তালুকদার তা মেনে নেন নি।কাসেম তালুকদার তার মেয়ে সেলিনাকে তাড়াহুড়া করে বিয়ে দিয়েছিল। বিয়ের আগের রাত্রি বদরুল সেলিনাকে নিয়ে পালিয়ে যেতেছিল কিন্তু নদীর মাঝপথে তাদের নৌকাসহ আটকিয়ে রেখে দেয় কাসেম তালুদারের ছেলে হামিদ। ইচ্ছে মতন দলবল নিয়ে বদরুলকে মেরে আহত করে দেয়। সেলিনাকে পরদিন বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পর  মেয়েটা শান্তি মতন জীবনযাপন করতে পারে নি। এক নেশাখোর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিল।তাড়াগুড়ো করে বিয়ে দেওয়ার ফরে ছেলের যাবতীয় বিবরন ও জানতে পারেন নি কাসেম তালুকদার। কি জানি এক ভয়াবহ রোগে ভুগতে ছিল ছেলেটি যার ফলে হঠাৎ মৃত্যু হল সেলিনার স্বামীর। আর সে দিন অনেক মার খাওয়ার পর ১৫ দিন জীবনের সাথে ভুগে মৃত্যু হয়েছিল বদরুলের।
সেই থেকে বদরুলের ছোট ভাই রাকিব খুজে বেড়াচ্ছে হামিদকে। রাকিব তার ভায়ের লাশের ওয়াদা নিয়েছিল  যেখানে হামিদকে পাবে পুতে মেরে ফেলে দিবেন।
প্রতিশোধ নিবে।

বেশ কিছু দিন ধরে সিরাজ ঢালীর শরীর খারাপ। বুঝতে পারছেন তার আয়ুকাল ছোট হয়ে আসছে।রাত্রে ভাল মতন ঘুমাতে পারেন না। ঘুমের চোখে মারামারি সংঘাত দেখে লাফিয়ে ওঠেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পেলেন হামিদককে রাকিব তার দলবল নিয়ে পাশের এলাকে থেকে ধরে নিয়ে এসেছে।সিরাজ ঢালী তাড়াহুড়ো করে তার ছেলে কাছে যাচ্ছেন। রাকিব গ্রামের স্কুলের মাঠের মাঝে হামিদকে বেধে রেখে মারার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কাসেম তালুকদার তার ছেলের করুন অবস্থার খবর পেয়ে স্কুলের মাঠে আসলেন।  নানা ভাবে রাকিবের কাছেন তার ছেলের জীবন ভিহ্মা চাচ্ছেন। রাকিব থামার পাত্র না। সে হামিদকে পেটাচ্ছে তো পেটাচ্ছে। এমন অবস্থায় সিরাজ ঢালী মাঠে এসে পড়েছেন কাসেম তালুকদার সিরাজ ঢালীর পায়ের উপর পড়ে তার ছেলের জন্য আকুতি বিনতি  করে তার ছেলের জীবন ভিহ্মা চাচ্ছেন। সিরাজ ঢালীর দয়া হল তিনি তার ছেলেকে আদেশ করলেন হামিদকে ছেড়ে দিতে। রাকিবের সাফ কথা তিনি তার ভাইয়ের লাশের ওয়াদা করেছেন লাশের বদলে  লাশ নিবেন। সিরাজ ঢালী তার ছেলেকে বলিলেন "তোর বাপের কথা বড় না তোর কসম বড়। "
রাকিব তার বাবার দিকে  তাকিয়ে হামিদকে ছেড়ে দিল।
কাসেম তালুকদার আজ লজ্জায় নিজের প্রতি ঘৃণা হল।আজ তার বিবেকের দরজা খুলে গেল তিনি সিরাজ ঢালীর কাছে তার পিছনের যানতীয় কাজের জন্য মাফ চাইলেন।
সিরাজ ঢালী কাসেম তালুকদারকে বলিলেন।


দেখ কাশেম আমি আমার পুত্র হারিয়ে বুঝেছি ছেলে হারানো কত কষ্টের আমি চায় না কেউ তার ছেলে হারান।আমি সংঘাত চাই না আমি চায় শান্তি। কাসেম তালুকদার সিরাজ ঢালীর কাছে ওয়াদা করলেন জীবনে যতদিন বেচে থাকবেন মারামারি হানাহানি করবেন। যতদিন বেচে থাকবেন ঢালী আর তালুকদারা একত্রে কাজ করে যাবেন। পুরনো শত্রুরা ভুলে বন্ধুর মতন থাকবেন। মুকসেদপুরকে শান্তির জায়গা বানিয়ে রাখবেন।
-----------
ছোট এই গল্পটি "ফ্যাশন ফ্যাস্টিবল" ও "ক্যায়া" ম্যাগাজিনের জন্য লেখা

প্রকাশিত ঃ জানুয়ারী ২০১৫

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

মুহূর্ত অনুভূতি (৬) - বাঙ্গালী ফেইজবুকার গর্বিত ফেইজবুকার । ব্যঙ্গ

যে যা বলুক আমি ফেইজবুক চালাবোই আর ফেইজবুক লাইফে ঘন ঘন আসবোই। এটা আমার স্বাধীনতা। আমার স্টাটাসে দেশের বা আমজনতার কোন উপকারে আসবে না বা কাজে ও দিবে না।তার পর ও আমি ফেইজবুকে আসবোই। আমি সাধারন মানুষ। আর বিশেষ কোন নেতার কাছে আমি তেমন পরিচিত নয়।বুঝতেই পারছেন আমার প্যাচাল শুনার বা করার কোন মাধ্যম নাই। 


শেষ ভরসা ফেইজবুক যার কেউ নাই তার ফেইজবুক আছে। কেউ শুনুক আর না শুনুক আমি স্টাটাস আর প্যাচালবাজী করে যাব। মনের শান্তি বড় শান্তি যেমনে বুঝাইয়া শান্তিতে রাখতে পারি।আমি বাঙ্গালী ফেইজবুকার গর্বিত ফেইজবুকার ।