কোন ভাষায় পড়তে চান সিলেক্ট করুন

সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

নাম বিকৃত করা গুনাহের কাজ - আল মারুফ মৃধা


প্রত্যেক ব্যাক্তিই তার নামকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে যে কারনে সে কখনই চায় না তার কেও বিকৃত বা ব্যাঙ্গাত্বক ভাবে ডাকুক । নামের মালিককে সবার কাছে হাস্যকর ভাবে উপস্থাপন করা, বিকৃতি করা , হাসি ঠাট্টা করার জন্য উপনাম দেয়া ব্যাক্তির হক নষ্ট করার নামন্তর।মানুষকে অপমান করা বা ঠাট্টা মসকরা করার জন্য তার নাম বিকৃত করা কবীরা গুনাহ এবং তা গীবতের শামিল।

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মাখলুক মানুষের নামকে ভেংচিয়ে, বিদ্রুপাত্বক ভাবে, অথবা নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে ডাকা বড় ধরনের গুনাহের কাজ । সুন্দরতম নাম সমূহের অধিকারী আল্লাহ, অতএব তোমরা সেসব নাম ধরে তাঁকে ডাকো।
যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো, তাদের কৃত কর্মের ফল তাদেরকে দেওয়া হবে। নাম বিকৃত করা আমাদের সমাজের স্বাভাবিক চিত্র।

কখনো আদর করেও নামের বিকৃতি হয়। যেমন ছোট বোনের নাম রোজিনা। ঘরের সবাই ডাকে রোজিবলে! এমন ডাকাটা অপরাধ নয়। নামের ভাব অর্থ ও ব্যক্তির প্রতি সম্মান বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত করা বা নামের অংশ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কিন্তু কাউকে অপমানমূলক বা হেয় করার জন্য কিংবা সাধারণ দুষ্টুমি করে বিকৃত নামে ডাকা হয়! এবং সেই ডাকার কারণে নামের অর্থ-ভাব-মর্যাদা নষ্ট হয় তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে কাজটি গুনাহের তালিকাভুক্ত। যেমন শফিকুর রহমান নামের সুস্থ সবল মানুষটিকে সইখ্যাবলে ডাকা!

সমাজে এটাও দেখা যায়, মানুষের মূল নাম বাদ দিয়ে ভিন্ন নামে ডাকেন এটাও ঘৃণিত।

যখন আপনি কারও নাম সঠিক ভাবে উচ্চারণ করেন বা লেখেন তখন তার অবচেতন মনে একধরনের ধারনা সৃষ্টি হয় যে, আপনি তার বিষয়ে যথেষ্ঠ যত্নশীল। এতে তিনি আপনার প্রতি খুশি হন এবং প্রভাবিত হন। কখনও কখনও বন্ধু-বান্ধবরা মজা করতে যেয়ে একে অপরকে উপনাম অথবা বিকৃত নামে ডেকে থাকে। মজা করতে যেয়েও এই ধরনের উপনাম অথবা বিকৃত নামে কাউকে ডাকা উচিত নয়। কারন মজা করার জন্য হলেও কোনো মানুষের অবচেতন মন এটাকে ভাল জিনিস হিসেবে গ্রহণ করে না। এই বিকৃত মজা নিতে যেয়ে কাউকে উপনাম অথবা বিকৃত নামে ডাকলে আসলে তা আপনার নিজের ব্যক্তিত্বের আকর্ষনটাই নষ্ট করবে।

তাই সঠিক ভাবে নাম লিখুন এবং উচ্চারণ করুন ।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কোনো মানুষকে বিদ্রুপাত্মক নামে ডাকতে নিষেধ করেছেন এবং অন্যত্র প্রত্যেককে তাদের পিতার নামানুসারে ডাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।মানুষকে ভিন্ননামে ডাকা, কটূক্তি করার মানে হলো তার কাছে ঋণী থাকা। অনেক সময় বন্ধু-বান্ধব বা কাছের আত্বীয়রা মজা করতে যেয়ে একে অপরকে উপনাম অথবা বিকৃত নামে ডেকে থাকে। মজা করতে যেয়েও এই ধরনের উপনাম অথবা বিকৃত নামে কাউকে ডাকা উচিত নয়। কারন মজা করার জন্য হলেও কোনো মানুষের অবচেতন মন এটাকে ভাল জিনিস হিসেবে গ্রহণ করে না। এই বিকৃত মজা নিতে যেয়ে কাউকে উপনাম অথবা বিকৃত নামে ডাকলে আসলে তা নিজের ব্যক্তিত্বের আকর্ষনটাই নষ্ট করে। কাজেই সাময়িক আনন্দ লাভের জন্য, একটু হাসি-মশকরার জন্য অন্যায়ভাবে কাউকে ডেকে গুনাহের পাল্লা ভারি করা । 
উৎস ঃ 

রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

মানুষ অভ্যাসের দাস – আল মারুফ মৃধা

অভ্যাস গঠন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি আচরণ, নিয়মিত পুনরাবৃত্তির দ্বারা, স্বয়ংক্রিয় অথবা স্বভাবসিদ্ধ হয়ে যায়। অভ্যাস হল এমন একটি পছন্দ যা আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু সময়ের জন্য করি এবং তারপর সে পছন্দ সম্পর্কে চিন্তা করা বন্ধ করে দিই, কিন্তু সে পছন্দটা চালিয়ে যাই অবিরত।

আমরা অভ্যাসকে দুই ভাগে ভাগ করে থাকি যেমনঃ 
  •  ভালো অভ্যাস
  •  খারাপ অভ্যাস

ভালো অভ্যাসঃ  সততা, সকাল সকাল ঘুমোতে যাওয়া এবং খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা এবং বড়দের সম্মান করা ভালো অভ্যাস ।
খারাপ অভ্যাসঃ ধূমপান, মদ্যপান, মাদক গ্রহণ, মিথ্যা কথা বলা, অধিক খাদ্য গ্রহণ, উৎকোচ গ্রহণ, প্রয়োজনের অধিক দ্রব ক্রয় এবং হিংসা খারাপ অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত।

মানুষ অভ্যাসের দাস ,নাকি অভ্যাস মানুষের দাস
  •  যখন বড় লোকের ছেলেরা ১০টা বাজার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারে না তখন সেটা মানুষ অভ্যাসের দাস।
  •  ঠিক যখন কোন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে কাজের জন্য সকাল ৬টাই ঘুম থেকে উঠে সেটা অভ্যাস মানুষের দাস।

শত শত অভ্যাস আমাদের দিনকে প্রভাবিত করে। তারা আমাদের গাইড করে-আমরা কিভাবে সকালে পোশাক পরি, কিভাবে অন্যদের সাথে সঙ্গে কথা বলি এবং কিভাবে বা কখন রাতে ঘুমাতে যাই , তারা প্রভাবিত করে আমরা দুপুরের খাবারে কী খাই, আমরা কিভাবে ব্যবসা করি । এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে, মানুষ কেন তাহলে একটা ভালো অভ্যাসের পরিবর্তে একটা খারাপ অভ্যাস গ্রহণ  করে ? ‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। হ্যাঁ, মানুষ তার অভ্যাসের একটা বড় অংশ গ্রহণ করে তার আশপাশ  যার মধ্যে পড়ে পরিবার, আবাস এলাকা, স্কুল, কর্মক্ষেত্র, বন্ধু সমাজ ইত্যাদি । একজন মানুষের অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রে পরিবার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।  যদি কোনো পরিবার নিয়মিত সন্তানদের নিয়ে একসঙ্গে রাতের খাবার খায়, তাহলে সন্তানরা দক্ষতার সঙ্গে স্কুলের দেয়া বাড়ির কাজ করতে পারে, স্কুলে ফলাফল ভালো করে, সন্তানদের মানসিক নিয়ন্ত্রণ হয় এবং তাদের আত্মবিশ্বাসও হয় অনেক বেশি।
কিশোর বয়সের শুরুতে জীবনের সঙ্গে যৌবনের প্রথম মিলন ঘটে। এ সময় হরমোনের উৎপাদন থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আর এ বয়সে সন্তানরা বিভিন্ন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কৌতূহলী হয়ে ওঠে। তারা একটু বেশি মুক্ত হতে চায় আর অনেক নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিশোরদের কাছে সবকিছু অনেক বড়, অনন্য এবং অবাক করার মতো লাগে, কারণ জীবনে প্রথম তারা এগুলোর সম্মুখীন হয়। অনেক সময় অভিভাবকরা একা তাদের কিশোর সন্তানদের সঙ্গে পেরে ওঠেন না। এভাবে অনেক কিশোর বিপথে পা দেয়। আজ আমাদের দেশে যে ৫০ থেকে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে, তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মাদকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে থাকতে পারে এই কিশোর বয়সে।  খারাপ অভ্যাসের গঠন প্রক্রিয়াও ভালো অভ্যাসের মতো  একই । তাই বেশি বেশি করে ভাল কাজের দিকে মনোযোগ দিতে হবে ।

যখন বলেন আপনি এসি রুম ছাডা থাকতে পারেন না তখন কি আপনি ভেবেছেন রাস্তার পাশের মানুষ গুলোর দিন কেমন যাচ্ছে? যখন বলেন আপনি মাছ-মাংস ছাডা খেতে পারেন না তখন কি একটু ভেবে দেখেছেন যারা পুরা দিন পরিশ্রম করেও রাতের ডাল-ভাত জোগার করতে পারে না? যখন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে ভিআইপি রান্না ঘরেও ডুকেন না তখন কি একটু ভেবেছেন গ্রাম বাংলার মা-বোনেরা কিভাবে পাতা আর কাঠ দিয়ে ফু ফু করে রান্না করে? আমরা এসি ওয়ালা অফিসে কাজ করি তাই ঘরমে বের হতে ভয় লাগে কিন্তু কখনো চিন্তা করি না প্রচন্ড ঘরমে রিক্সা চালক টা কিভাবে জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে? আমরা যেটা অভ্যাস নাই বলে চালিয়ে দেয় সেটা অভ্যাস না সেটা হচ্ছে আমাদের দুর্বলতা। কারন সেটা করতে আমরা বাধ্য হয়নি তাই সেটার অভ্যাস নাই।যখন পরিস্থিতি আমদের সেদিকে ঠেলে দিবে তখন সেটা অভ্যাসে পরিনত হবে।
মানুষ অভ্যাসের দাস- এমন কথা কে না জানে, তবে এটাই শেষ কথা নয়। অপ্রয়োজনীয় বদঅভ্যাস যা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক, ইচ্ছা করলে মানুষই পারে এমন অভ্যাস ত্যাগ করতে। বদঅভ্যাস ত্যাগ করা বা অভ্যাসকে বস করা  সহজ কাজ যদিন আপনার লক্ষ্য আর মাইন্ডসেটআপ ঠিক থাকে । অভ্যাস বদলের ও নতুন অভ্যাস সৃষ্টির এ পদ্ধতিটি বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছেন। এটা একটি গবেষণালব্ধ বিষয়। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। 

সংকলনেঃ আল মারুফ মৃধা  
উৎসঃ
মানুষ অভ্যাসের দাস - ড. কাজী ছাইদুল হালিম - যুগান্তর
"মানুষ অভ্যাসের দাস" নাকি "অভ্যাস মানুষের দাস"? - লেখক  নামহীন (সামহোয়্যার ইনব্লগ)
অভ্যাস মানুষের দাস, নাকি মানুষ অভ্যাসেরদাস? - -লে.কর্নেল মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন খান, পিএসসি (অব.)

উইকিপিডিয়া