"ছোট গল্প "
২৫ তারিখে ঈদ, ২৯ তারিখে বিয়ে, অথচ এই নিয়ে রাফির কোনো মাথাব্যথা নেই। রাফি আছে তার মতো, আর মিথীলা নানা দুশ্চিন্তায়। এখনো রাফিকে গুছিয়ে আনতে পারেননি মিথীলা। বাবার কথা ছাড়া রাফি এক কদমও চলেন না। আজ মিথীলা রাফিকে বললো, "চল, মার্কেটে যাই, কিছু কেনাকাটা করবো।" কিন্তু রাফির সাফ কথা, "আজ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবো না, বাবা বারণ করেছেন, কিন্তু কালকে বের হতে পারবো।" মিথীলার মন খারাপ হলেও, তা মেনে নিলেন।
রাফির বাবা, হামিদ খন্দকার, পেশায় একজন ব্যাংকার হলেও তিনি জ্যোতিষীও বটে। তিনি তার পূর্বপুরুষদের থেকে এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। হামিদ সাহেবের বাবা মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, "হামিদ, তুই আমাদের বংশের শেষ ব্যক্তি, যে এই ধারা বজায় রাখতে পারবে।" বাস্তবে তাই ঘটেছে। হামিদ খন্দকারেই এই ধারাবাহিকতা শেষ। রাফির এই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
সকালে মিথীলার ফোন আসে, "কি, কাল তো বললে আজ আমার সাথে মার্কেটে যাবে, মনে আছে তো?" রাফি সহজভাবেই জবাব দেয়, "হ্যাঁ, যাবো, রেডি হও, আসছি।" রুম থেকে বের হওয়ার আগে রাফি তার নিত্যকার অভ্যাস অনুযায়ী বাবার কাছে গিয়ে বলে, "আব্বু, হাত দেখো তো, আজ কি বের হওয়া যাবে?" হামিদ খন্দকার রাফির হাত দেখে মুচকি হেসে বললেন, "হ্যাঁ, আজ যেতে পারো।"
রাফি জানতে চায়, "যেতে তো পারবো, কিন্তু তুমি হাসলে কেন, আব্বু?"
হামিদ খন্দকার জবাব দেন, "তোর জন্য নয়, আমার জন্য হাসছি। আজ আমি কিছু অপ্রত্যাশিত উপহার পেতে যাচ্ছি, তাই।"
রাফি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয়ে মিথীলার কাছে গেলো। মিথীলা রাফিকে নিয়ে সরাসরি দেশের প্রথম দেশীয় পোশাকের মার্কেট শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে চলে গেলেন। মিথীলা তার পছন্দমতো পোশাক কিনে নিলেন। রাফিকে কিছু কিনে দিতে চাইলেও কী কিনবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। শেষে নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন, ঈদ সামনে, তাই একটা পাঞ্জাবি কিনে রাফিকে সারপ্রাইজ দেবেন।
মার্কেটের দোতলার এক দোকানে রাফিকে একটি সাদা ডিজাইন করা পাঞ্জাবি দেখতে দেখলেন মিথীলা। ধরে নিলেন, সেটাই রাফির পছন্দ হয়েছে। ফাঁকে, রাফির অজান্তেই পাঞ্জাবিটি কিনে ফেললেন মিথীলা। ফেরার পথে রিকশায় বসে মিথীলা রাফির হাতে ব্যাগটি দিলেন। রাফি জানতে চাইলেন, "ব্যাগে কী আছে?" মিথীলার সাফ জবাব, "বাড়ি গিয়ে দেখবে, এখন নয়।"
বাড়ি এসে পাঞ্জাবিটি দেখে রাফি অবাক হয়ে গেলেন। "আরে, এই পাঞ্জাবিটা তো আমি আব্বুর জন্য পছন্দ করেছিলাম!" নিজে নিজেই বললেন রাফি।
ঠিক তখনই মিথীলার ফোন এলো, "কী, পাঞ্জাবিটা খুব পছন্দ হয়েছে, তাই না? তোমাকে দেখেই বুঝেছিলাম!"
রাফি জবাব দিলেন, "পছন্দ হয়েছিল ঠিকই, তবে আমার জন্য নয়, আব্বুর জন্য পছন্দ করেছিলাম।"
মিথীলা পুরো বোকা হয়ে গেলেন, কিন্তু সাথে সাথেই জানিয়ে দিলেন, "না হয় হবু শ্বশুরকে গিফট দিলাম!"
রাফি বুঝতে পারলেন, তার বাবার কথাই ঠিক। তিনি আজ সত্যিই কিছু অপ্রত্যাশিত পেয়েছেন।
২৯ তারিখে বিয়ের দিনে ফুলচন্দনের রাতে হামিদ খন্দকার তাদের হাত দেখে বলেছিলেন, তাদের পরিবারে দুটি পুত্রসন্তান আসবে। রাফি আর মিথীলার বিয়ের ৮ বছর হয়ে গেছে। হামিদ খন্দকার মারা গেছেন প্রায় দু'বছর হলো। অথচ সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়নি। মিথীলার পরিবারে দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে, কোনো পুত্রসন্তান নেই।
এক রাতে রাফি স্বপ্নে তার বাবার দেখা পান। বাবাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "কই, তোমার দুইটা নাতি? আমি আর কতকাল অপেক্ষা করবো?"
বাবা জবাব দিলেন, "অপেক্ষা করো। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।"
রাফি ও মিথীলা ধৈর্য ধরলেন। তাদের বিয়ের ১৪ বছরে এক জোড়া পুত্রসন্তানের জন্ম হলো, যেন হামিদ খন্দকারের ভবিষ্যদ্বাণী অবশেষে সত্যি হলো।